Friday, June 17, 2016

Bangla Waz সিয়াম সফল করার উপায় Dr. Khandaker Abdullah Jahangir (R)

Bangla Waz সিয়াম সফল করার উপায় Dr. Khandaker Abdullah Jahangir
Bangla Waz সিয়াম সফল করার উপায় Dr. Khandaker Abdullah Jahangir

Bangla Waz সিয়াম সফল করার উপায় Dr. Khandaker Abdullah Jahangir (R)



Source link: https://www.youtube.com/user/SunnahTrust

TAGS: bangla video waz, siyam sofol korar upay, ramadan karim bangla waz by Dr. Khandaker Abdullah Jahangir (R), সিয়াম সফল করার উপায় ডঃখোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহিমাহুল্লাহ.

Tuesday, June 14, 2016

রমজান মাসের ৯ টি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত!

Ramadan kareem, রমজান মাসের ৯ টি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত!
রমজান মাসের ৯ টি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত!

রমজান মাসের ফজিলত

রমজান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আনন্দ প্রকাশ করাই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :—

(قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ (يونس: 58
বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম। [সূরা ইউনুস : ৫৮]
পার্থিব কোন সম্পদের সাথে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না, তা হবে এক ধরনের অবাস্তব কল্পনা। যখন রমজানের আগমন হত তখন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হতেন, তার সাহাবাদের বলতেন :—

أتاكم رمضان شهر مبارك
তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। এরপর তিনি এ মাসের কিছু ফজিলত বর্ণনা করে বলতেন :—

فرض الله عز وجل عليكم صيامه، تفتح فيه أبواب السماء، وتغلق فيه أبواب الجحيم، وتغل فيه مردة الشياطين، لله فيه ليلة خير من ألف شهر، من حرم خيرها فقد حرم. رواه النسائي
আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়। এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল। বর্ণনায় : নাসায়ী 
আমাদের কর্তব্য: আল্লাহর এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করা, এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া ও ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকা।

এ মাসের যে সকল ফজিলত রয়েছে তা হল :
এক. এ মাসের সাথে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকনের সম্পর্ক রয়েছে ; আর তা হলে সিয়াম পালন।
হজ যেমন জিলহজ মাসের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে সে মাসের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে এমনি সিয়াম রমজান মাসে হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা বেড়ে গেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :—

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ. سورة البقرة : 183
হে মোমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর-যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। [সূরা বাকারা : ১৮৩]

রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ইসলাম যে পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত তার একটি হল সিয়াম পালন। এ সিয়াম জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম ; যেমন হাদিসে এসেছে :—

من آمن بالله ورسولـه، وأقام الصلاة، وآتى الزكاة، وصام رمضان، كان حقاً على الله أن يدخله الجنة … رواه البخاري
যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল, সালাত কায়েম করল, জাকাত আদায় করল, সিয়াম পালন করল রমজান মাসে, আল্লাহ তাআলার কর্তব্য হল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো…। বোখারি

দুই. রমজান হল কোরআন নাজিলের মাস : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন –

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ : البقرة : 184
রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল-কোরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। সূরা বাকারা : ১৮৪

রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র আল-কোরআন একবারে নাজিল হয়েছে। সেখান হতে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করে। কোরআন নাজিলের দুটি স্তরই রমজান মাসকে ধন্য করেছে। শুধু আল-কোরআনই নয় বরং ইবরাহিম আ.-এর সহিফা, তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল সহ সকল ঐশী গ্রন্থ এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে বলে তাবরানী বর্ণিত একটি সহি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। (সহি আল-জামে)

এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি করে কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত। প্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও তাকে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন। আর জীবনের শেষ রমজানে আল্লাহর রাসূল দু বার পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত করেছেন। সহি মুসলিমের হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত।

তিন. রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় শয়তানদের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—

إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة، وأغلقت أبواب النار، وصفدت الشياطين. وفي لفظ : (وسلسلت الشياطين) رواه مسلم
যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে-শয়তানের শিকল পড়ানো হয়। (মুসলিম)

তাই শয়তান রমজানের পূর্বে যে সকল স্থানে অবাধে বিচরণ করত রমজান মাস আসার ফলে সে সকল স্থানে যেতে পারে না। শয়তানের তৎপরতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে দেখা যায় ব্যাপকভাবে মানুষ তওবা, ধর্মপরায়ণতা, ও সৎকর্মের দিকে অগ্রসর হয় ও পাপাচার থেকে দূরে থাকে। তারপরও কিছু মানুষ অসৎ ও অন্যায় কাজ-কর্মে তৎপর থাকে। কারণ, শয়তানের কু-প্রভাবে তারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয়ে পড়েছে।

চার. রমজান মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা বলেন :—

لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ ﴿3﴾ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ ﴿4﴾ سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ ﴿5﴾ (القدر: 3-5)
লাইলাতুল কদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনি উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। [সূরা আল-কদর : ৩-৫] 

পাঁচ. রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—

لكل مسلم دعوة مستجابة، يدعو بـها في رمضان. رواه أحمد
রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। (মুসনাদ আহমদ)

অন্য হাদিসে এসেছে –

إن لله تبارك وتعالى عتقاء في كل يوم وليلة، (يعني في رمضان) وإن لكل مسلم في كل يوم وليلة دعوة مستجابة. صحيح الترغيب والترهيب.
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়। (সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব)

তাই প্রত্যেক মুসলমান এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের কল্যাণের জন্য যেমন দোয়া-প্রার্থনা করবে, তেমনি সকল মুসলিমের কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জ্ঞাপন করবে।

ছয়. রমজান পাপ থেকে ক্ষমা লাভের মাস। যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপসমূহ ক্ষমা করানো থেকে বঞ্চিত হলো আল্লাহর রাসূল তাকে ধিক্কার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন :—

.. رغم أنف رجل، دخل عليه رمضان، ثم انسلخ قبل أن يغفر له. .رواه الترمذي
ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি। (তিরমিজি)

সত্যিই সে প্রকৃত পক্ষে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত যে এ মাসেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল।

সাত. রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির লাভের মাস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—

إذا كان أول ليلة من رمضان صفدت الشياطين ومردة الجن، وغلقت أبواب النار، فلم يفتح منها باب، وفتحت أبواب الجنة فلم يغلق منها باب، وينادي مناد كل ليلة : يا باغي الخير أقبل! ويا باغي الشر أقصر! ولله عتقاء من النار، وذلك في كل ليلة. رواه الترمذي
রমজান মাসের প্রথম রজনির যখন আগমন ঘটে তখন শয়তান ও অসৎ জিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, এ মাসে আর তা খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে তা আর বন্ধ করা হয় না। প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে সৎকর্মের অনুসন্ধানকারী তুমি অগ্রসর হও ! হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী তুমি থেমে যাও ! এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।  (তিরমিজি)

আট. রমজান মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। যেমন হাদিসে এসেছে যে, রমজান মাসে ওমরাহ করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বরং, রমজান মাসে ওমরাহ করা আল্লাহর রাসূলের সাথে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। এমনিভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল সৎকাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেশি দেয়া হয়।

নয়. রমজান ধৈর্য ও সবরের মাস। এ মাসে ঈমানদার ব্যক্তিগণ খাওয়া-দাওয়া, বিবাহ-শাদি ও অন্যান্য সকল আচার-আচরণে যে ধৈর্য ও সবরের এত অধিক অনুশীলন করেন তা অন্য কোন মাসে বা অন্য কোন পর্বে করেন না। এমনিভাবে সিয়াম পালন করে যে ধৈর্যের প্রমাণ দেয়া হয় তা অন্য কোন ইবাদতে পাওয়া যায় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন :—
إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ. الزمر: 10
ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেয়া হবে। [সূরা যুমার : ১০]

Sunday, June 12, 2016

হজরত উমার ফারুক (রা) কে ৪টি ঐতিহাসিক প্রশ্ন করেছিলেন এক খিৃস্টান বাদশাহ

omar bin khattab ra, হজরত উমার ফারুক (রা) কে ৪টি ঐতিহাসিক প্রশ্ন করেছিলেন এক খিৃস্টান বাদশাহ
হজরত উমার ফারুক (রা) কে ৪টি ঐতিহাসিক প্রশ্ন করেছিলেন এক খিৃস্টান বাদশাহ
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রা.) কে এক খৃষ্টান বাদশাহ চারটি প্রশ্ন লিখে চিঠি পাঠিয়েছিলেন এবং আসমানী কিতাবের আলোকে প্রশ্নের উত্তর চেয়েছিলেন। সেই চিঠির ৪টি প্রশ্ন পরবর্তিতে ঐতিহাসিক প্রশ্ন হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত হয়ে আছে।

১ম প্রশ্নঃ একই মায়ের পেট হতে দু’টি বাচ্চা একই দিনে একই সময় জন্ম গ্রহন করেছে এবং একই দিনে ইন্তেকাল করেছে তবে, তাদের একজন অপরজন থেকে ১০০ বছরের বড় ছিলো। তারা দুইজন কে? কিভাবে তা হয়েছে?

২য় প্রশ্নঃ পৃথিবীর কোন্ স্থানে সূর্যের আলো শুধুমাত্র একবার পড়েছে। কেয়ামত পর্যন্ত আর কখনো সূর্যের আলো সেখানে পড়বে না?

৩য় প্রশ্নঃ সে কয়েদী কে, যার কয়েদ খানায় শ্বাস নেওয়ার অনুমতি নেই আর সে শ্বাস নেওয়া ছাড়াই জীবিত থাকে?

৪র্থ প্রশ্নঃ  সেটি কোন কবর, যার বাসিন্দা জীবিত ছিল এবং কবরও জীবিত ছিল, আর সে কবর তার বাসিন্দাকে নিয়ে ঘোরাফেরা করেছে এবং কবর থেকে তার বাসিন্দাজীবিত বের হয়ে দীর্ঘকাল পৃথিবীতে জীবিত ছিল?

হজরত উমার ফারুক (রা) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে ডাকলেন এবং উত্তরগুলো লিখে দিতে বললেন।

১ম উত্তরঃ দুই ভাই ছিলেন হযরত ওযায়ের (আঃ) এবং ওযায়েয (আঃ) তারা একই দিনে জন্ম এবং একই দিনে ইন্তেকাল করা সত্বেও ওযায়েয (আঃ) ওযায়ের (আঃ) থেকে ১০০ বছরের বড় হওয়ার কারন হল, মানুষকে আল্লাহ তায়ালা মৃত্যুর পর আবার কিভাবে জীবিত করবেন? হযরত ওযায়ের (আঃ) তা দেখতে চেয়ে ছিলেন। ফলে, আল্লাহ তাকে ১০০ বছর যাবত মৃত্যু অবস্থায় রাখেন এরপর তাঁকে
জীবিত করেন। যার কারনে দুই ভাইয়ের বয়সের মাঝে ১০০ বছর ব্যবধান হয়ে যায়।

২য় উত্তরঃ হযর মুসা (আঃ) এর মু’জিযার কারনে বাহরে কুলযুম তথা লোহিত সাগরের উপর রাস্তা হয়ে যায় আর সেখানে সূর্যের আলো পৃথিবীর ইতিহাসে একবার পড়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত আর পড়বে না।

৩য় উত্তরঃ যে কয়েদী শ্বাস নেওয়া ছাড়া জীবিত থাকে, সে কয়েদী হল মায়ের পেটের বাচ্চা, যে নিজ মায়ের পেটে কয়েদ (বন্দী) থাকে।

৪র্থ উত্তরঃ  যে কবরের বাসিন্দা জীবিত এবং কবরও জীবিত ছিলো, সে কবরের বাসিন্দা হলেন, হযরত ইউনুস (আঃ) আর কবর হল, ইউনুস (আঃ) যে মাছের পেটে ছিলেন- সে মাছ। আর মাছটি, ইউনুস (আঃ) কে নিয়ে ঘোরাফেরা করেছে। মাছের পেট থেকে বের হয়ে আসার পর, ইউনুস (আঃ) অনেক দিন জীবিত ছিলেন। এরপর ইন্তেকাল করেন।
Source link: http://islamergolpo.com/

হজরত উমার ফারুক (রা) এর জীবনী - ড. মোহাম্মদ মনজুরে ইলাহী



Source link: https://www.youtube.com/user/OIEPdhaka

Thursday, June 9, 2016

কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিতির এর সলাত


বিতর ছালাত (صلاة الوتر)



বিতর ছালাত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ।[1] যা এশার ফরয ছালাতের পর হ’তে ফজর পর্যন্ত সুন্নাত ও নফল ছালাত সমূহের শেষে আদায় করতে হয়।[2] বিতর ছালাত খুবই ফযীলতপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বাড়ীতে বা সফরে কোন অবস্থায় বিতর ও ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত পরিত্যাগ করতেন না।[3]

‘বিতর’ অর্থ বেজোড়। যা মূলতঃ এক রাক‘আত। কেননা এক রাক‘আত যোগ না করলে কোন ছালাতই বেজোড় হয় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘রাতের নফল ছালাত দুই দুই (مَثْنَى مَثْنَى)। অতঃপর যখন তোমাদের কেউ ফজর হয়ে যাবার আশংকা করবে, তখন সে যেন এক রাক‘আত পড়ে নেয়। যা তার পূর্বেকার সকল নফল ছালাতকে বিতরে পরিণত করবে’।[4] অন্য হাদীছে তিনি বলেন, اَلْوِتْرُ رَكْعَةٌ مِّنْ آخِرِ اللَّيْلِ ‘বিতর রাত্রির শেষে এক রাক‘আত মাত্র’।[5] আয়েশা (রাঃ) বলেন, وَكَانَ يُوْتِرُ بِوَاحِدَةٍ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক রাক‘আত দ্বারা বিতর করতেন’। [6]

রাতের নফল ছালাত সহ বিতর ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১১ ও ১৩ রাক‘আত পর্যন্ত (وَلاَ بِأَكْثَرَ مِنْ ثَلاَثَ عَشْرَةَ) পড়া যায় এবং তা প্রথম রাত্রি, মধ্য রাত্রি, ও শেষ রাত্রি সকল সময় পড়া চলে।[7] যদি কেউ বিতর পড়তে ভুলে যায় অথবা বিতর না পড়ে ঘুমিয়ে যায়, তবে স্মরণ হ’লে কিংবা রাতে বা সকালে ঘুম হ’তে জেগে উঠার পরে সুযোগ মত তা আদায় করবে।[8] অন্যান্য সুন্নাত-নফলের ন্যায় বিতরের ক্বাযাও আদায় করা যাবে।[9] তিন রাক‘আত বিতর একটানা ও এক সালামে পড়াই উত্তম।[10] ৫ রাক‘আত বিতরে একটানা পাঁচ রাক‘আত শেষে বৈঠক ও সালাম সহ বিতর করবে। [11] সাত ও নয় রাক‘আত বিতরে ছয় ও আট রাক‘আতে প্রথম বৈঠক করবে। অতঃপর সপ্তম ও নবম রাক‘আতে শেষ বৈঠক করে সালাম ফিরাবে।[12]

চার খলীফাসহ অধিকাংশ ছাহাবী, তাবেঈ ও মুজতাহিদ ইমামগণ এক রাক‘আত বিতরে অভ্যস্ত ছিলেন।[13] অতএব ‘এক রাক‘আত বিতর সঠিক নয় এবং এক রাক‘আতে কোন ছালাত হয় না’। ‘বিতর তিন রাক‘আতে সীমাবদ্ধ’। ‘বিতর ছালাত মাগরিবের ছালাতের ন্যায়’। ‘তিন রাক‘আত বিতরের উপরে উম্মতের ইজমা হয়েছে’ বলে যেসব কথা সমাজে চালু আছে, শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই’।[14] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা মাগরিবের ছালাতের ন্যায় (মাঝখানে বৈঠক করে) বিতর আদায় করো না’।[15] উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতরের ১ম রাক‘আতে সূরা আ‘লা, ২য় রাক‘আতে সূরা কাফেরূণ ও ৩য় রাক‘আতে সূরা ইখলাছ পাঠ করতেন। ঐ সাথে ফালাক্ব ও নাস পড়ার কথাও এসেছে।[16] এসময় তিনি শেষ রাক‘আতে ব্যতীত সালাম ফিরাতেন না (وَلاَ يُسَلِّمُ إِلاَّ فِي آخِرِهِنَّ)। [17]

কুনূত (القنوت) :

‘ কুনূত’ অর্থ বিনম্র আনুগত্য। কুনূত দু’প্রকার। কুনূতে রাতেবাহ ও কুনূতে নাযেলাহ। প্রথমটি বিতর ছালাতের শেষ রাক‘আতে পড়তে হয়। দ্বিতীয়টি বিপদাপদ ও বিশেষ কোন যরূরী কারণে ফরয ছালাতের শেষ রাক‘আতে পড়তে হয়। বিতরের কুনূতের জন্য হাদীছে বিশেষ দো‘আ বর্ণিত হয়েছে।[18] বিতরের কুনূত সারা বছর পড়া চলে।[19] তবে মাঝে মধ্যে ছেড়ে দেওয়া ভাল। কেননা বিতরের জন্য কুনূত ওয়াজিব নয়। [20] দো‘আয়ে কুনূত রুকূর আগে ও পরে[21] দু’ভাবেই পড়া জায়েয আছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَّدْعُوَ عَلَى أَحَدٍ أَوْ لِأَحَدٍ قَنَتَ بَعْدَ الرُّكُوْعِ، متفق عليه-

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কারো বিরুদ্ধে বা কারো পক্ষে দো‘আ করতেন, তখন রুকূর পরে কুনূত পড়তেন...।[22] ইমাম বায়হাক্বী বলেন,

رُوَاةُ الْقُنُوْتِ بَعْدَ الرُّكُوْعِ أَكْثَرُ وَأَحْفَظُ وَعَلَيْهِ دَرَجَ الْخُلَفَاءُ الرَّاشِدُوْنَ-

‘রুকূর পরে কুনূতের রাবীগণ সংখ্যায় অধিক ও অধিকতর স্মৃতিসম্পন্ন এবং এর উপরেই খুলাফায়ে রাশেদ্বীন আমল করেছেন’। [23] হযরত ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ, আনাস, আবু হুরায়রা (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী থেকে বিতরের কুনূতে বুক বরাবর হাত উঠিয়ে দো‘আ করা প্রমাণিত আছে।[24] কুনূত পড়ার জন্য রুকূর পূর্বে তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় দু’হাত উঠানো ও পুনরায় বাঁধার প্রচলিত প্রথার কোন বিশুদ্ধ দলীল নেই।[25] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, বিতরের কুনূত রুকূর পরে হবে, না পূর্বে হবে এবং এই সময় দো‘আ করার জন্য হাত উঠানো যাবে কি-না। তিনি বললেন, বিতরের কুনূত হবে রুকূর পরে এবং এই সময় হাত উঠিয়ে দো‘আ করবে।[26] ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) বলেন, বিতরের কুনূতের সময় দু’হাতের তালু আসমানের দিকে বুক বরাবর উঁচু থাকবে। ইমাম ত্বাহাবী ও ইমাম কার্খীও এটাকে পসন্দ করেছেন।[27] এই সময় মুক্তাদীগণ ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলবেন।[28]

দো‘আয়ে কুনূত (دعاء قنوت الوتر) :

হাসান বিন আলী (রাঃ) বলেন যে, বিতরের কুনূতে বলার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে নিম্নোক্ত দো‘আ শিখিয়েছেন।-

اَللَّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِىْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ، فَإِنَّكَ تَقْضِىْ وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، إنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ، وَ لاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ، وَصَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِىِّ-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাহ্দিনী ফীমান হাদায়তা, ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফায়তা, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়া বা-রিক্লী ফীমা ‘আ‘ত্বায়তা, ওয়া ক্বিনী শার্রা মা ক্বাযায়তা; ফাইন্নাকা তাক্বযী ওয়া লা ইয়ুক্বযা ‘আলায়কা, ইন্নাহূ লা ইয়াযিল্লু মাঁও ওয়া-লায়তা, ওয়া লা ইয়া‘ইয্ঝু মান্ ‘আ-দায়তা, তাবা-রক্তা রববানা ওয়া তা‘আ-লায়তা, ওয়া ছাল্লাল্লা-হু ‘আলান্ নাবী’ ।[29]

জামা‘আতে ইমাম ছাহেব ক্রিয়াপদের শেষে একবচন...‘নী’-এর স্থলে বহুবচন.... ‘না’ বলতে পারেন।[30]

অনুবাদ : হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে সুপথ দেখিয়েছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে সুপথ দেখাও। যাদেরকে তুমি মাফ করেছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে মাফ করে দাও। তুমি যাদের অভিভাবক হয়েছ, তাদের মধ্যে গণ্য করে আমার অভিভাবক হয়ে যাও। তুমি আমাকে যা দান করেছ, তাতে বরকত দাও। তুমি যে ফায়ছালা করে রেখেছ, তার অনিষ্ট হ’তে আমাকে বাঁচাও। কেননা তুমি সিদ্ধান্ত দিয়ে থাক, তোমার বিরুদ্ধে কেউ সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তুমি যার সাথে বন্ধুত্ব রাখ, সে কোনদিন অপমানিত হয় না। আর তুমি যার সাথে দুশমনী কর, সে কোনদিন সম্মানিত হ’তে পারে না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি বরকতময় ও সর্বোচ্চ। আল্লাহ তাঁর নবীর উপরে রহমত বর্ষণ করুন’।

দো‘আয়ে কুনূত শেষে মুছল্লী ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সিজদায় যাবে।[31] কুনূতে কেবল দু’হাত উঁচু করবে। মুখে হাত বুলানোর হাদীছ যঈফ।[32] বিতর শেষে তিনবার সরবে ‘সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস’ শেষদিকে দীর্ঘ টানে বলবে’।[33] অতঃপর ইচ্ছা করলে বসেই সংক্ষেপে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করবে এবং সেখানে প্রথম রাক‘আতে সূরা যিলযাল ও দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা কাফেরূণ পাঠ করবে।[34]

উল্লেখ্য যে, اَللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ আল্লা-হুম্মা ইন্না নাস্তা‘ঈনুকা ওয়া নাস্তাগফিরুকা...’ বলে বিতরে যে কুনূত পড়া হয়, সেটার হাদীছ ‘মুরসাল’ বা যঈফ।[35] অধিকন্তু এটি কুনূতে নাযেলাহ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে, কুনূতে রাতেবাহ হিসাবে নয়।[36] অতএব বিতরের কুনূতের জন্য উপরে বর্ণিত দো‘আটিই সর্বোত্তম। [37]

ইমাম তিরমিযী বলেন, لاَ نَعْرِفُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْقُنُوْتِ شَيْئًا أَحْسَنَ مِنْ هَذَا ‘নবী করীম (ছাঃ) থেকে কুনূতের জন্য এর চেয়ে কোন উত্তম দো‘আ আমরা জানতে পারিনি’।[38]

কুনূতে নাযেলাহ (قنوت النازلة) :

যুদ্ধ, শত্রুর আক্রমণ প্রভৃতি বিপদের সময় অথবা কারুর জন্য বিশেষ কল্যাণ কামনায় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে বিশেষভাবে এই দো‘আ পাঠ করতে হয়। ‘কুনূতে নাযেলাহ’ ফজর ছালাতে অথবা সব ওয়াক্তে ফরয ছালাতের শেষ রাক‘আতে রুকূর পরে দাঁড়িয়ে ‘রববানা লাকাল হাম্দ’ বলার পরে দু’হাত উঠিয়ে সরবে পড়তে হয়। [39] কুনূতে নাযেলাহর জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে নির্দিষ্ট কোন দো‘আ বর্ণিত হয়নি। অবস্থা বিবেচনা করে ইমাম আরবীতে[40] দো‘আ পড়বেন ও মুক্তাদীগণ ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলবেন। [41] রাসূল (ছাঃ) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি বা শক্তির বিরুদ্ধে এমনকি এক মাস যাবৎ একটানা বিভিন্নভাবে দো‘আ করেছেন।[42] তবে হযরত ওমর (রাঃ) থেকে এ বিষয়ে একটি দো‘আ বর্ণিত হয়েছে। যা তিনি ফজরের ছালাতে পাঠ করতেন এবং যা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে দৈনিক পাঁচবার ছালাতে পাঠ করা যেতে পারে। যেমন-

اَللَّهُمَّ اغْفِرْلَنَا وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ، وَأَلِّفْ بَيْنَ قُلُوْبِهِمْ وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ ، وَانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوِّكَ وَعَدُوِّهِمْ، اَللَّهُمَّ الْعَنِ الْكَفَرَةَ الَّذِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِكَ وَيُكَذِّبُوْنَ رُسُلَكَ وَيُقَاتِلُوْنَ أَوْلِيَاءَكَ، اَللَّهُمَّ خَالِفْ بَيْنَ كَلِمَتِهِمْ وَزَلْزِِلْ أَقْدَامَهُمْ وَأَنْزِلْ بِهِمْ بَأْسَكَ الَّذِيْ لاَ تَرُدُّهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِيْنَ-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফির লানা ওয়া লিল মু’মিনীনা ওয়াল মু‘মিনা-তি ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমা-তি, ওয়া আল্লিফ বায়না কুলূবিহিম, ওয়া আছলিহ যা-তা বায়নিহিম, ওয়ান্ছুরহুম ‘আলা ‘আদুউবিকা ওয়া ‘আদুউবিহিম। আল্লা-হুম্মাল‘আনিল কাফারাতাল্লাযীনা ইয়াছুদ্দূনা ‘আন সাবীলিকা ওয়া ইয়ুকায্যিবূনা রুসুলাকা ওয়া ইয়ুক্বা-তিলূনা আউলিয়া-আকা। আল্লা-হুম্মা খা-লিফ বায়না কালিমাতিহিম ওয়া ঝালঝিল আক্বদা-মাহুম ওয়া আনঝিল বিহিম বা’সাকাল্লাযী লা তারুদ্দুহূ ‘আনিল ক্বাউমিল মুজরিমীন।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এবং সকল মুমিন-মুসলিম নর-নারীকে ক্ষমা করুন। আপনি তাদের অন্তর সমূহে মহববত পয়দা করে দিন ও তাদের মধ্যকার বিবাদ মীগোশতা করে দিন। আপনি তাদেরকে আপনার ও তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন। হে আল্লাহ! আপনি কাফেরদের উপরে লা‘নত করুন। যারা আপনার রাস্তা বন্ধ করে, আপনার প্রেরিত রাসূলগণকে অবিশ্বাস করে ও আপনার বন্ধুদের সাথে লড়াই করে। হে আল্লাহ! আপনি তাদের দলের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে দিন ও তাদের পদসমূহ টলিয়ে দিন এবং আপনি তাদের মধ্যে আপনার প্রতিশোধকে নামিয়ে দিন, যা পাপাচারী সম্প্রদায় থেকে আপনি ফিরিয়ে নেন না’।[43]

অতঃপর প্রথমবার বিসমিল্লাহ... সহ ইন্না নাস্তা‘ঈনুকা .... এবং দ্বিতীয়বার বিসমিল্লাহ... সহ ইন্না না‘বুদুকা ...বর্ণিত আছে।[44]

উল্লেখ্য যে, উক্ত ‘কুনূতে নাযেলাহ’ থেকে মধ্যম অংশটুকু অর্থাৎ ইন্না নাস্তা‘ঈনুকা ... নিয়ে সেটাকে ‘কুনূতে বিতর’ হিসাবে চালু করা হয়েছে, যা নিতান্তই ভুল। আলবানী বলেন যে, এই দো‘আটি ওমর (রাঃ) ফজরের ছালাতে কুনূতে নাযেলাহ হিসাবে পড়তেন। এটাকে তিনি বিতরের কুনূতে পড়েছেন বলে আমি জানতে পারিনি।[45]

[1] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৩; নাসাঈ হা/১৬৭৬; মির‘আত ২/২০৭; ঐ, ৪/২৭৩-৭৪; শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী, হুজ্জাতুল্লা-হিল বা-লিগাহ ২/১৭। [2] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫৯২-৯৩। [3] . ইবনুল ক্বাইয়িম, যা-দুল মা‘আ-দ (বৈরূত : মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ২৯ সংস্করণ, ১৪১৬/১৯৯৬) ১/৪৫৬। [4] . عَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَجُلاً سَأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَلاَةِ اللَّيْلِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صَلاَةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى، فَإِذَا خَشِيَ أَحَدُكُمُ الصُّبْحَ صَلَّى رَكْعَةً وَاحِدَةً تُوتِرُ لَهُ مَا قَدْ صَلَّى- বুখারী (ফাৎহ সহ) হা/৯৯০ ‘বিতর’ অধ্যায়-১৪; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১২৫৪ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ-৩৫। [5] . মুসলিম, মিশকাত হা/১২৫৫। [6] . ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১২৮৫। [7] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৫; আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১২৬৩-৬৫; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১২৬১। [8] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ মিশকাত হা/১২৬৮, ১২৭৯; নায়ল ৩/২৯৪, ৩১৭-১৯, মির‘আত ৪/২৭৯। [9] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৮; নায়লুল আওত্বার ৩/৩১৮-১৯। [10] . মির‘আত ৪/২৭৪; হাকেম ১/৩০৪ পৃঃ। [11] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১২৫৬; মির‘আত ৪/২৬২। [12] . মুসলিম, মিশকাত হা/১২৫৭; বায়হাক্বী ৩/৩০; মির‘আত ৪/২৬৪-৬৫। [13] . নায়লুল আওত্বার ৩/২৯৬; মির‘আত ৪/২৫৯। [14] . মিরক্বাত ৩/১৬০-৬১, ১৭০; মির‘আত হা/১২৬২, ১২৬৪, ১২৭৩ -এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্যঃ ৪/২৬০-৬২, ২৭৫। [15] . দারাকুৎনী হা/১৬৩৪-৩৫; সনদ ছহীহ। [16] . হাকেম ১/৩০৫, আবুদাঊদ, দারেমী, মিশকাত হা/১২৬৯, ১২৭২। [17] . নাসাঈ হা/১৭০১, ‘ক্বিয়ামুল লাইল’ অধ্যায়-২০, অনুচ্ছেদ-৩৭; মির‘আত ৪/২৬০। [18] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১২৭৩। [19] . প্রাগুক্ত, মিশকাত হা/১২৭৩; মির‘আত ৪/২৮৩; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৬। [20] . আবুদাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১২৯১-৯২ ‘কুনূত’ অনুচ্ছেদ-৩৬; মির‘আত ৪/৩০৮। [21] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১২৮৯; ইবনু মাজাহ হা/১১৮৩-৮৪, মিশকাত হা/১২৯৪; মির‘আত ৪/২৮৬-৮৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৭; আলবানী, ক্বিয়ামু রামাযান পৃঃ ২৩। [22] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১২৮৮। [23] . বায়হাক্বী ২/২০৮; তুহফাতুল আহওয়াযী (কায়রো : ১৪০৭/১৯৮৭) হা/৪৬৩-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ২/৫৬৬ পৃঃ। [24] . বায়হাক্বী ২/২১১-১২; মির‘আত ৪/৩০০; তুহফা ২/৫৬৭। [25] . ইরওয়াউল গালীল হা/৪২৭; মির‘আত ৪/২৯৯, ‘কুনূত’ অনুচ্ছেদ-৩৬। [26] . তুহফা ২/৫৬৬; মাসায়েলে ইমাম আহমাদ, মাসআলা নং ৪১৭-২১। [27] . মির‘আত ৪/৩০০ পৃঃ। [28] . মির‘আত ৪/৩০৭; ছিফাত ১৫৯ পৃঃ; আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১২৯০। [29] . সুনানু আরবা‘আহ, দারেমী, মিশকাত হা/১২৭৩ ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ-৩৫; ইরওয়া হা/৪২৯, ২/১৭২। উল্লেখ্য যে, কুনূতে বর্ণিত উপরোক্ত দো‘আর শেষে ‘দরূদ’ অংশটি আলবানী ‘যঈফ’ বলেছেন। তবে ইবনু মাসঊদ, আবু মূসা, ইবনু আববাস, বারা, আনাস প্রমুখ ছাহাবী থেকে বিতরের কুনূত শেষে রাসূলের উপর দরূদ পাঠ করা প্রমাণিত হওয়ায় তিনি তা পাঠ করা জায়েয হওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন -ইরওয়া ২/১৭৭, তামামুল মিন্নাহ ২৪৬; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৭)। ছাহেবে মির‘আত বলেন, ইবনু আবী আছেম ও ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, ইবনু হিববান বর্ণিত কুনূতে وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنَتُوْبُ إِلَيْكَ -এসেছে (মির‘আত ৪/২৮৫)। তবে সেটি বর্তমান গবেষণায় প্রমাণিত হয়নি। সেকারণ আমরা এটা ‘মতন’ থেকে বাদ দিলাম। তবে দো‘আয়ে কুনূতের শেষে ইস্তেগফার সহ যেকোন দো‘আ পাঠের ব্যাপারে অধিকাংশ বিদ্বান মত প্রকাশ করেছেন। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কুনূতে কখনো একটি নির্দিষ্ট দো‘আ পড়তেন না, বরং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দো‘আ পড়েছেন (দ্রঃ আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ আবুদাঊদ, তিরমিযী প্রভৃতি, মিশকাত হা/১২৭৬; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ ২৩/১১০-১১; মির‘আত ৪/২৮৫; লাজনা দায়েমাহ, ফৎওয়া নং ১৮০৬৯; মাজমূ‘ ফাতাওয়া উছায়মীন, ফৎওয়া নং ৭৭৮-৭৯)। তাছাড়া যেকোন দো‘আর শুরুতে হাম্দ ও দরূদ পাঠের বিষয়ে ছহীহ হাদীছে বিশেষ নির্দেশ রয়েছে (আহমাদ, আবুদাঊদ হা/১৪৮১; ছিফাত পৃঃ ১৬২)। অতএব আমরা ‘ইস্তেগফার’ সহ যেকোন দো‘আ ও ‘দরূদ’ দো‘আয়ে কুনূতের শেষে পড়তে পারি। [30] . আহমাদ, ইরওয়া হা/৪২৯; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৭২২; শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া, প্রশ্নোত্তর সংখ্যা : ২৯০, ৪/২৯৫ পৃঃ। [31] . আহমাদ, নাসাঈ হা/১০৭৪; আলবানী, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী, ১৬০ পৃঃ। [32] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৭; যঈফ আবুদাঊদ হা/১৪৮৫; বায়হাক্বী, মিশকাত হা/২২৫৫ -এর টীকা; ইরওয়াউল গালীল হা/৪৩৩-৩৪, ২/১৮১ পৃঃ। [33] . নাসাঈ হা/১৬৯৯ সনদ ছহীহ। [34] . আহমাদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১২৮৪, ৮৫, ৮৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯৯৩। [35] . মারাসীলে আবুদাঊদ হা/৮৯; বায়হাক্বী ২/২১০; মিরক্বাত ৩/১৭৩-৭৪; মির‘আত ৪/২৮৫। [36] . ইরওয়া হা/৪২৮-এর শেষে, ২/১৭২ পৃঃ। [37] . মির‘আত হা/১২৮১-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ৪/২৮৫ পৃঃ। [38] . তুহফাতুল আহওয়াযী হা/৪৬৩-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ২/৫৬৪ পৃঃ; বায়হাক্বী ২/২১০-১১। [39] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১২৮৮-৯০; ছিফাত ১৫৯; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৮-৪৯। [40] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯৭৮, ‘ছালাতে অসিদ্ধ ও সিদ্ধ কর্ম সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১৯; মির‘আত হা/৯৮৫-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য, ৩/৩৪২ পৃঃ; শাওকানী, আসসায়লুল জার্রার ১/২২১। [41] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১২৯০; মির‘আত ৪/৩০৭; ছিফাত ১৫৯ পৃঃ। [42] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১২৮৮-৯১। [43] . বায়হাক্বী ২/২১০-১১। বায়হাক্বী অত্র হাদীছকে ‘ছহীহ মওছূল’ বলেছেন। [44] . বায়হাক্বী ২/২১১ পৃঃ। [45] . ইরওয়াউল গালীল হা/৪২৮, ২/১৭২ পৃঃ।

সিয়াম পালনের কিছু সুন্নাতি আদব


সিয়াম পালনের কিছু মুস্তাহাব বা সুন্নাত আদব আছে যেগুলো পালন করলে সাওয়াব বেড়ে যাবে। আর তা ছেড়ে দিলে রোযা ভঙ্গ হবে না বা গোনাহও হবে না। তবে পুণ্যে ঘাটতি হবে। কিন্তু তা আদায় করলে সওয়াবের পরিপূর্ণতা আসে। নিম্নে এসব আদব উল্লেখ করা হল :

[১] সাহরী খাওয়া।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً

(ক) তোমরা সাহরী খাও, কারণ সাহরীতে বরকত রয়েছে। (বুখারী : ১৯২৩; মুসলিম : ১০৯৫)

مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ أَكْلَةُ السَّحَرِ

(খ) আমাদের (মুসলিমদের) ও ইয়াহূদী-নাসারাদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক্য হল সাহরী খাওয়া। (মুসলিম : ১০৯৬)

অর্থাৎ আমরা সিয়াম পালন করি সাহরী খেয়ে, আর ইয়াহূদী-নাসারারা রোযা রাখে সাহরী না খেয়ে।

نِعْمَ سَحُورُ الْمُؤْمِنِ التَّمْرُ

(গ) মু’মিনের সাহরীতে উত্তম খাবার হল খেজুর। (আবূ দাঊদ : ২৩৪৫)

السَّحُورُ أَكْلُهُ بَرَكَةٌ فَلاَ تَدَعُوهُ وَلَوْ أَنْ يَجْرَعَ أَحَدُكُمْ جُرْعَةً مِنْ مَاءٍ فَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ

(ঘ) (রোযাদারদের জন্য) সাহরী হল একটি বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিও না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন। (আহামদ : ১০৭০২)

[২] সাহরী দেরী করে খাওয়া।

অর্থাৎ তা শেষ ওয়াক্তে খাওয়া উত্তম। রাতের শেষাংশে গ্রহণকৃত খাবারকে সাহরী বলা হয়।

[৩] সাহরীর সময়কে ইবাদতে কাজে লাগানো। প্রতিরাতের শেষ তৃতীয়াংশ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরশ থেকে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। আর বান্দাদেরকে এই বলে আহবান করেন :

مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ وَمَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ وَمَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ

‘‘এখন যে ব্যক্তি আমার কাছে দু‘আ করবে আমি তা কবূল করব, যা কিছু আমার কাছে এখন চাইবে আমি তাকে তা দিব এবং যে আমার কাছে এখন মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দিব। (বুখারী : ৬৩২১;  মুসলিম : ৭৫৮)

অতএব তখন কুরআন অধ্যয়ন, তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদের সালাত আদায়, তাওবাহ-ইস্তিগফার ও দু‘আ কবূলের জন্য এটা এক উত্তম সময়। তাদের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন :

﴿ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ ﴾ [الذاريات: ١٨]

‘‘তারা শেষ রাতে জেগে উঠে তাওবাহ-ইস্তিগফার করে।’’ (সূরাহ যারিয়াত-১৮)

[৪] সূর্য অস্ত যাওয়ামাত্র ইফতার করা অর্থাৎ তাড়াতাড়ি ইফতার করা। অতিরঞ্জিত সাবধানতার নামে ইফতার বিলম্ব না করা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ

(ক) অর্থাৎ মানুষ যতদিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (বুখারী : ১৯৫৭; মুসলিম : ১০৯৮)

لاَ يَزَالُ الدِّينُ ظَاهِرًا مَا عَجَّلَ النَّاسُ الْفِطْرَ لِأَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى يُؤَخِّرُونَ

(খ) যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন দ্বীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইয়াহূদী ও নাসারাদের অভ্যাস হল ইফাতর দেরীতে করা। (আবূ দাঊদ : ২৩৫৩)

ثَلاَثَةُ مِنْ أَخْلاَقِ النَّبُوَّةِ : تَعْجِيْلُ الإِفْطَارِ وَتَأْخِيْرُ السَّحُوْرِ وَوَضْعِ الْيَمِيْنِ عَلَى الشِّمِالِ فِي الصَّلاَةِ

(গ) তিনটি বিষয় নাবী চরিত্রের অংশ : সময় হওয়ামাত্র ইফতার করে ফেলা, সাহরী শেষ ওয়াক্তে খাওয়া এবং সালাতে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ১০৫)

كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ -صلى الله عليه وسلم- أَسْرَعُ النَّاسَ إِفْطَارًا وَأَبْطَأُهُمْ سُحُوْرًا

(ঘ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীগণ সকলের আগে তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং সকলের চেয়ে দেরীতে সাহরী খেতেন। (মুসান্নাফ আঃ রাযযাক : ৭৫৯১)

[৬] মাগরিবের সালাতের পূর্বে ইফতার করা এবং খেজুর বা পানি দ্বারা ইফতার করা।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,

كَانَ رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- يُفْطِرُ عَلَى رُطَبَاتٍ قَبْلَ أَن يُّصَلِّيَ...

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মাগরিবের) সালাতের পুর্বে তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর পাওয়া না যেত তবে শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। আর যদি শুকনা খেজুর পাওয়া না যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন। (আহমাদ : ৩/১৬৪)

তবে পেট ভর্তি করে খাওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

مَا مَلأُ ابْنُ آدَمَ وِعَاءُ بَطْنِهِ

‘‘যে ব্যক্তি পেট ভর্তি করে খানা খায় তার ঐ পেট (আল্লাহর কাছে) একটি নিকৃষ্ট পাত্র।’’ (তিরমিযী : ২৩৮০)

সুন্নাত হল পেটের তিন ভাগের একভাগ খাবার খাবে, আর তিনভাগের একভাগ পানি পান করবে। বাকী এক তৃতীয়াংশ শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য খালী রেখে দিবে। (তিরমিযী : ২৩৮০)

[৫] ইফতারের সময় দু‘আ করা

এ মুহূর্তটি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়ার সময়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إِنَّ للهِ تَعَالَى عِنْدَ كُلِّ فِطْرٍ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ وَذَلِكَ كُلّ لَيْلَةٍ لِكُلِّ عَبْدٍ مِنْهُمْ دَعْوَةً مُسْتَجَابَةً

(ক) ইফতারের সময় আল্লাহ রববুল ‘আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর এ মুক্তি দানের পালা রমাযানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে। সে সময় সিয়াম পালনকারী প্রত্যেক বান্দার দু‘আ কবূল হয়।’’ (আহমাদ : ৭৪৫০)

(খ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন :

اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ

হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোযা রেখেছি, আর তোমারই রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।

উল্লেখ্য যে, আল্লামা নাসিরুদ্দ্বীন আলবানী উপরোক্ত হাদীসটিকে দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

 (ঙ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতারের সময় নিম্নের এ দুআটি পাঠ করতেন :

ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ

অর্থ : ‘‘পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল।’’ (আবূ দাউদ : ২৩৫৭, দারাকুতনী : ২২৭৯ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)

ইফতারের সময় যখন আযান হয় তখন আযানের পরের সময়টা দু‘আ কবূলের সময়। হাদীসে আছে আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দু‘আ কবূল হয়।

[৬] বেশি বেশি কুরআন পাঠ করা, সালাত আদায়, যিকর ও দু‘আ করা।

রমযান যেহেতু কুরআন নাযিলের মাস সেহেতু এ মাসে কুরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন অন্য সময়ের চেয়ে বেশি করা উচিৎ।

রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ

সিয়াম ও কুরআন কিয়ামতের দিন (আল্লাহর কাছে) মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে, হে রব! দিনের বেলায় আমি তাকে পানাহার ও যৌন উপভোগ থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর।

কুরআনও বলবে, হে রব! (রাতে কুরআন পাঠের কারণে) রাতের নিদ্রা থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই এ পাঠকের ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ মঞ্জুর কর। তিনি বলেন, অতঃপর উভয়েরই সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (আহমাদ : ৬৫৮৯)

[৭] ইবাদতের তাওফীক কামনা ও আল্লাহর দয়া অনুধাবন করা

আমরা যে ইবাদত করি তাও আল্লাহর দয়া। তিনি যে এ কাজে আমাদেরকে তাওফীক দিয়েছেন সেজন্য আমরা তার শুকরিয়া আদায় করি। অনেকের ভাল কাজও আবার কবূল হয় না। আল্লাহ বলেন :

﴿  ...إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلۡمُتَّقِينَ ٢٧ ﴾ [المائ‍دة: ٢٧]

‘‘কেবলমাত্র মুত্তাকীদের কাজই আল্লাহ কবূল করেন। (মায়িদাহ : ২৭)

ভয় ও আশা নিয়ে যেন আমরা ইবাদত করি। গর্ব-অহঙ্কার ও হিংসা বান্দার ইবাদতকে নষ্ট করে দেয় এবং কুফরী ও শির্ক করলে তার কোন নেকই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং ইবাদতসমূহ ধ্বংস ও বাতিল হয়ে যায়।

[৮] ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা।

তাদেরকে যাকাত, ফিত্‌রা ও সাদাকাহ দেয়া। হাদীসে এসেছে :

كَانَ رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- أَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ وَكَانَ أَجْوَدَ مَا يَكُونُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমাযানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত। (মুসলিম : ২৩০৮)

[৯] উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা।

রমযান ধৈর্যধারনের মাস। আর সিয়াম হল এ কার্য প্রশিক্ষণের ইনিষ্টিটিউট। কাজেই এ সময় আমাদেরকে সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

فَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ يَوْمَئِذٍ وَلاَ يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ

‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেন বলে, ‘‘আমি রোযাদার’’। (মুসলিম : ১১৫১)

[১০] অপচয় ও অযথা খরচ থেকে বিরত থাকা।

খাওয়া দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ ও আরাম আয়েশে অনেকেই অপচয় ও অপব্যয় করে থাকে। এটা এক গর্হিত কাজ। এ থেকে বিরত থাকা।

[১১] রুটিন করে সময়টাকে কাজে লাগানো।

অহেতুক কথাবার্তা, আড্ডা বাজি, গল্প-গুজব, বেহুদা তর্কবিতর্ক পরিহার করা। রুটিন করে পরিকল্পনা ভিত্তিক কাজ করা। এতে জীবন অধিকতর ফলপ্রসূ হবে।

[১২] দুনিয়াবী ব্যস্ততা কমিয়ে দেয়া।

রমাযানের এ বরকতময় মাসে অর্থ উপার্জন ও ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যস্ততা কমিয়ে দিয়ে আখিরাতের মুনাফা অর্জনের জন্য অধিকতর বেশি সময় দেয়া আবশ্যক। দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী আর আখিরাত চিরস্থায়ী।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿ وَٱلۡأٓخِرَةُ خَيۡرٞ وَأَبۡقَىٰٓ ١٧ ﴾ [الاعلا: ١٧]

‘‘আর আখিরাতের জীবন সর্বোত্তম এবং চিরস্থায়ী।’’ (সূরা আ‘লা : ১৭)

[১৩] খাওয়া ও নিদ্রায় ভারসাম্য রক্ষা করা।

কেউ কেউ এতো বেশি খাবার খায় যে নাস্তা ও দুপুরের খাবার শুধু ইফাতের এক বেলায়ই তা পুষিয়ে নেয়। আবার তারাবীহ ও সেহরীর ওয়াক্তের দ্বিগুণ দিনের বেলায় ঘুমিয়ে তা কাযা করে। এভাবে চললে খাবার ও ঘুমের কুরবানী হলো কীভাবে? তাই এ বিষয়ে রোযাদারকে ত্যাগ তীতিক্ষা করতে হবে এবং এ দু’এর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে সিয়াম পালন করে যেতে হবে।

[১৪] ফজর উদয় হওয়ার পূর্বেই রোযার নিয়ত করা।

[১৫] আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা।

রমাযানের পবিত্র দিন ও রাতগুলোতে ইবাদত করার তাওফীক দেয়ায় মাবুদের প্রশংসা করা।